ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

মহেশখালীতে কমিউনিটি ক্লিনিকের বেহাল দশা ॥ সরকারী ঔষধ খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ

ffffআবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী-

কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ছয়টি ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র গুলিতে বিভিন্ন অনিয়ম,দূর্ণীতি খোলা বাজারে ঔষধ বিক্রি ও প্রয়োজনীয় লোকবলের চরম সংকটের কারণে একদিকে এলাকার গরীব অসহায় সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে অপরদিকে এলাকার গরীব ও নিরহ জনসাধারণ বিনামূল্যে বিভিন্ন রকম ঔষধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি ভাবে এলাকার অসহায় গরীব ও নিরহ লোকদের বিনামূল্যে বিভিন্ন রকম ঔষধ দেয়ার নিয়ম থাকলেও উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিক গুলিতে কর্মরত ডাক্তার ও মার্টকর্মিরা সরকারী নিয়মকে বৃদ্ধঙ্গুলী দেখিয়ে তা মোটা অংকের বিনিময়ে উক্ত ঔষধগুলো খোলাবাজারের বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান। সম্প্রতি গত কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিষ্ট এরক সরকারী ঔষধ খোলা বাজারে বিক্রির সময় স্থানীয় জনতা তাকে হাতে নাথে ধরে উত্তম-মদ্যম দিয়ে হাসপাতালের টিএইচ,র নিকট হস্তান্তর করলেও হাসপাতালের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উক্ত ফার্মাসিষ্ট আরো বেপরোয়া হয়ে রাতের আধারে তার নিয়োজিত সিন্ডিকেট সদস্যদের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম দামী সরকারী ঔষধ উপজেলা সদরের বাইরের ফার্মেসিগুলিতে মোটা অংকের বিনিময়ে বেচা বিক্রি করে আসছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ।

অপরদিকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সদের টাকা না দিলে তারা কোন চিকিৎসা বা সরকারী ঔষধ বিনামূল্যে দেয়া হয়না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকলেও উক্ত কেন্দ্রে নিয়োজিত ডাক্তাররা ঠিকই মাসের শেষে তারা বেতন ভাতা তুলে নেয়। চালু থাকা কেন্দ্র সমূহের মাধ্যে ও ডাক্তার নেই বহু দিন থেকে এ কারণে গ্রামে গঞ্জের অসহায় লোকজন চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় অনেক গরীব ও অসহায় লোককে বিনা চিকি]সায় মৃত্যু বরণ করতে হচেছ। বর্তমান স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের সরকার ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তৃণমুল পর্যায়ে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে এ কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো চালু করেছিলেন। মাঝপথে সরকার পরিবর্তনের কারণে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনরায় চালু করেন। চালু হওয়ার পর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিতে অদ্যধাবধি বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় টিকাদানে সমস্যায় পড়তে হয় স্বাস্থ্য সহকারীদের। ইতিমধ্যে বেশীর ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রর ভবণে ফাটল ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

 উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র থাকলেও তা গরীব ও নিরহ জনগণের চিকিৎসার কাজে আসছেনা। একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা,একজন উপ-সহকারি কমিউনিটি চিকিৎসক কর্মকর্তা সহ ৬ জন লোকবল থাকার কথা। ৬ টি কেন্দ্রের কোনটিতে মেডিকেল অফিসার কর্মরত নেই। চাকমো পদ ৬টিতে আছে মাত্র ৩’জন, ভিজিটর আছে ১জন,৬ জন ফারর্মাসিষ্ট এর স্থলে ছয়টিও শূন্য,মিডওয়াইফ (ধাত্রী) ১ জনের স্থানে শূন্য,নার্সকোটা ২টিতে খালী রয়েছে। ৬জন মালীতে আছে ১জন,৭ আয়ার স্থলে আছে ৩জন ৪টিতে শূন্য । এসব লোকবল শূন্য থাকার দরুন ধলঘাটা, ও কুতুবজোম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে র্দীঘ কয়েক বছর ধরে। আর বাকি ৪টি ইউনিয়ন শাপলাপুর, মাতারবাড়ি ও হোয়ানক বড় মহেশখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা আরো করুণ দশা । শুধু ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নয় উপজেলা কেন্দ্র ও সতেরটি পদের জায়গায় ৮টি পদেই শূন্য।এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা কর্মকর্তা ,ভিজিটর ছাড়া, শুধু উপ-সহকারি কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তার মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো। এই কেন্দ্র গুলি দু’বছর ধরে বন্ধ থাকায় এলাকার লোকজন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। অপরদিকে স্বাস্থ্য কেন্দেগুলিতে নিয়মিত একজন চিকিৎসক না থাকায় উপকুলের লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এলাকার হাতুড়ে চিকিৎসকদের শরানাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক মৃত্যু বরণ করছে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, কুতুবজোম, মতারবাড়ি,ধলঘাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রটিগুলি বন্ধ রয়েছে। উপকুলীয় এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সম্ভল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকার কারণে স্থানীয় লোকজন সেবার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে বিনা চিকি]সায় ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করার ব্যাপারে কোন রকম উদ্যোগ নিচ্ছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে পাঁচ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। যোগদানের কয়েক মাস পর বিভিন্ন তদবির করে এসব চিকিৎসকরা অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। এলাকার সচেতন মহলের মতে চিকিৎসক সহ অন্যান্য লোকবল চরম সংকটের কারণে এই এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত হলেও এসব দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সহ অন্যান্য শুন্য পদে লোকবল নিয়ে নিয়োগ দিয়ে এলাকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জোর দাবী জানান।

মহেশখালী পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে লোকবল সংকটের কারণে গ্রামে লোকজন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করার জন্য লোকবল চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার আবেদন করার পর পরও কর্তপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয় ভাবে লোকবল নিয়োগ দিয়ে সংকট দূর করা গেলে সকল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মাঝে সেবার মান বাড়বে। তিনি আরো জানান ৩৮’জন এফ ডাব্লিও এর কোটায় ২৮জন কর্মস্থলে থাকলে ১০ জন বৃদ্ধ বয়স্ক ও অসুস্থতা জনিত কারনে কাজ করতে অক্ষম।

মহেশখালী উপজেলা হাসপাতালের আর এম ও ডাঃ মাফুজুল হক বলেন, হাসপাতালের জন্য ২৯টি ডাক্তারের পদ থাকলেও আছে ৬ জন, একারনে হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।যার কারণে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে । তিনি জানান ডাক্তার,নার্স ও প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবিহিত করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: